ডাইনোসরের বিলুপ্তি- এক অজানা অধ্যায়।
জেনে নেই ডাইনোসর বিলুপ্তির কারন??
মানব সভ্যতাও কি এভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে??
পৃথিবি জীবন বেড়ে ওঠার জন্য কয়েক বিলিয়ন বছর সময় নিয়েছে । তার পরেই আজ মানুষ এতো বুদ্ধিমান,এবং লাগাদার পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের নতুন নতুন খোজে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতো বুদ্ধিমান সভ্যতা হওয়ার পরেও পৃথিবীতে আমরা সুরক্ষিত হতে পারিনি। পৃথিবির বদলে যাওয়া ইনভাইরোনমেন্ট, আর স্পেসে ঘুরতে থাকা এস্ট্রোয়েড যদি আমাদের পৃথিবীতে একটাও আঘাত হানে আমরা কোনভাবেই মানব সভ্যতাকে বাচাতে সক্ষম হবোনা। হতে মানুষের সাথে ঠিক তেমনটাই হবে যেমনটা ডাইনোসর দের সাথে হয়েছিল। মানে এক বড়সড় এস্ট্রোয়েড এক ধাক্কায় পৃথিবি থেকে মানব সভ্যতাকে মুছে ফেলবে। আর আপনি বিশ্বাস করবেন না এমন এস্ট্রোয়েড আমাদের সৌরজগতে লাখের হিসেবে রয়েছে। যদি সেগুলোর একটাও তাদের অর্বিট থেকে সামান্য কিছু ডিগ্রিও পথভ্রষ্ট হয়ে যায়,শুধু মানব সভ্যতা কেন পৃথিবিকেই শেষ করে ফেলবে। এদের মধ্যে কিছু এস্ট্রোয়েড তো সালের পরিবর্তনে পৃথিবীর খুব কাছ দিয়েই যায়।
আমরা আজ এমনি একটি এস্ট্রোয়েড ১৯৯৮OR2 সমন্ধে জানবোঃ
যেই এস্ট্রোয়েডটি প্রত্যেক ৩২ বছর পর পর পৃথিবীর পাশ দিয়ে যায় ৷ প্রত্যেক বার এটি পৃথিবীর কাছে আসতে থাকছে হতে পারে কিছু বছর পর।
সবার প্রথমে আমরা ১৯৯৮OR2 সমন্ধে জেনে নেই।
এই এস্ট্রোয়েডটি সুর্যকে একটি ইসেন্ট্রিক ওর্বিট এ প্রদক্ষিন করছে। ইসেন্ট্রিক ওর্বিটকে বিজ্ঞানিরা আনডিফাইন অর্বিট ও বলে থাকে। এই ধরনের ওর্বিটে থাকা বস্তু গুলি সময়ের সাথে নিজ ওর্বিট পরিবর্তন করতে থাকে।
ঠিক এমনি ওর্বিট এ থাকা এই এস্ট্রোয়েডটি তার নিজ ওর্বিট পরিবর্তন করে আর সময়ের সাথে সাথে সে পৃথিবীর আরো কাছে আসতে থাকে।
২০২০ সাল.... এটি পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে যাচ্ছিলো পৃথিবি আর এই এস্ট্রোয়েডের মধ্যেকার দুরত্ব তখন ৭.০৮ মিলিয়ন কিলোমিটার। দেখতে তো অনেক লাগছে কিন্তু ইউনিভার্সাল লেভেলে এই দুরত্ব কিছুই না। আর এই এস্ট্রোয়েডের যে গতি, সামান্য কোন এস্ট্রোয়েডের ঢাক্কা যদি এতে লাগে তাহলেই এটি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে। আর এত বড় দুরত্ব এক দিনেই সে কভার করে ফেলবে।
১৯৯৮OR2 এর আকরের কথা তুলনা করলে দেখা যাবে ২*৪কিলোমিটার লম্বা এবং হিমালয়ের তুলনায় ১০ গুন বড়। এই এস্ট্রোয়েড কে ১৯৯৮ তে খোজা হয়েছিলো। এই এস্ট্রোয়েডকে নিয়ার আর্থ ওবজেক্ট বলা হয় কারন এটি পৃথিবীর কাছেই থাকে।
১৯৯৮ সালে এস্ট্রোয়েড টি খোজার পর থেকে আমরা তার উপর চোখ লাগিয়ে ছিলাম। তার ওর্বিট ট্রাজেক্টরি আমরা এখন জানি। এখন থেকে ২০০ বছর পর্যন্ত আমাদের কোন ভয় নেই। এস্ট্রোয়েডটি ২০০ বছরে আমাদের পৃথিবির খুব একটা কাছে আসতে পারবেনা। কিন্তু মহাবিশ্বে সকল বস্তু ক্যালকুলেশন মতাবেক যে চলবে তা তো হতে পারেনা।২০০ বছর পর বা তার আগেই এই এস্ট্রায়েড এর সাথে আর একটি এস্ট্রোয়েড়ের ধাক্কা লেগে তার গতিপথ বদলে গেলো! আর ঠিক পৃথিবী বরাবর আসা শুরু করলো তাই, একে পৃথিবীর জন্যে একটা থ্রেট হিসেবে ক্লাসিফাইড করা হয়েছে। কারন এটি তার ওর্বিটের সামান্য পরিবর্তন করলেই আমাদের জন্যে ডেঞ্জার হিসেবে ধেয়ে আসবে
আপাততো কোন নিয়ার আর্থ বস্তু থেকে আমাদের কোন ভয় নেই।
তবে ধরে নেই যে, ১৯৯৮OR2 আমাদের পৃথিবীতে এসে পড়লো তাহলে কি পরিমান ক্ষয় ক্ষতি হতে পারে?
উদাহরনস্বরুপ আগে ডাইনোসর বিলুপ্তির সময় "চিকসুলাব"নামে একটি এস্ট্রোয়েড পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিলো যা ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার ডায়ামিটার এর ছিলো। যেই এস্ট্রোয়েডের আঘাত এতটাই ভয়ংকর ছিলো যে যেখানে আঘাত করেছে সেখানে ১৫০ কিলোমিটার গর্ত ফেলেছিলো । এর থেকে বের হওয়া তাপ এর আশে পাশে ৭০ -৮০ কিলোমিটারে যা যা ছিলো সব ছাই হয়ে গেছে । হোক সে প্রানি হোক সে গাছ পালা সব ধংস হয়ে গেছে । এই ধাক্কার পর পৃথিবির ভুমির ছোট অংশ আকাশে উঠে যায় । এরপর বিশাল বড় বড় ভুমিকম্প আসতে শুরু করে,সব কটা আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরন শুরু করে। যেই পাথর গুলো আকাশে উড়ে গেছিলো সেগুলো আবার পৃথিবীর গ্রাভিটির কারনে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে আগুনের দলা হয়ে বৃষ্টির মত পড়া শুরু করে। এরপর পৃথিবির আবহাওয়া এমন বানিয়ে ফেলে যে কোন প্রকার জ্বীব বসবাস করা অসম্ভব হয়ে যায়। আর এটাই কারন যে সে সময়কার ৯০% জ্বীব বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সেই হিসেবে ১৯৯৮OR2 চিন্তা করলে দেখা যাবে যে এটি আগেরটার মত বড় নয়। হতে পারে এটি পৃথিবী থেকে সকল জীবন মুছে ফেলবেনা কিন্তু ধাক্কা লাগার সাথে সাথে কোটি কোটি মানুষ মরে যাবে। এরপর বড় বড় ভুমিকম্প শুরু হবে সমুদ্র পাগলের মতো সুনামিতে পরিনত হবে। আগ্নেয়গিরির গুলো একটিভ হয়ে বিস্ফোরন শুরু করবে। এক দুই কিলোমিটার ডায়ামিটার এর এস্ট্রোয়েড টিও সমুদের মধ্যে ১০০ মিটার উচু ঢেউ তৈরি করে ফেলবে সমুদ্রের কিনারার দেশ গুলো নিমিষের তলিয়ে যাবে। আর এর কারনে যে ভুমিকম্প সৃষ্টি হবে তাতে বড় বড় দেশ ধংস হয়ে যেতে পারে । আর সবথেকে যেটি ক্ষতিকর হবে সেটি হলো আঘাতের পর বায়ুমন্ডলের অবস্থা। হতে পারে পৃথিবীতে "আইস এজ"সংঘটিত হলো । সুর্য আর আকাশে উঠতে দেখা যাবেনা বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের কারনে মানুষ বিভিন্ন রোগে মারা যেতে শুরু করবে। আইস এজের জন্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ চলে যাবে যে,অবস্থায় মানুষ বসবাস করতে পারবেনা খাবার পানি সব বরফে পরিনত হবে। গাছ পালা সব সুর্যের আলো না পেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
এখনকার সময় আমাদের কাছে এর থেকে বাচার কোন উপায় নেই। বিভিন্ন স্পেস এজেন্সি এমন কিছু টেকনলোজিতে কাজ করছে যা আমাদের ভবিষ্যতে এই সব এস্ট্রোয়েডকে ট্রাক করে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।
মন্তব্যসমূহ